আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ (৭৬৩-৮০৯খ্রি.) এর শাসন আমলে বাহলুল নামে এক পাগল ছিল। যে অধিকাংশ সময় কবরস্থানে কাটাতো। কবরস্থানে থাকা অবস্থায় একদিন বাদশাহ হারুনুর রশীদ তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
বাদশাহ তাকে ডাক দিলেন: বাহলুল! ওই পাগল! তোর কি আর জ্ঞান ফিরবে না ?
বাহলুল বাদশাহর এ কথা শুনে নাচতে নাচতে গাছের উপরের ডালে চড়লেন এবং সেখান থেকে ডাক দিল- হারুন! ওই পাগল! তোর কি কোনদিন জ্ঞান ফিরবে না?
বাদশাহ গাছের নিচে এসে বাহলুলকে বললেন, আমি পাগল নাকি তুই, যে সারা দিন কবরস্থানে বসে থাকে? বাহলুল বলল, আমিই বুদ্ধিমান।
বাদশাহ: কীভাবে?
বাহলুল রাজপ্রাসাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, আমি জানি এই রঙ্গীলা দালান ক্ষণিকের আবাসস্থল, এবং এটি (কবরস্থান) স্থায়ী নিবাস; এজন্য আমি মরার পূর্বেই এখানে বসবাস শুরু করেছি। অথচ তুই গ্রহণ করেছিস ঐ রঙ্গশালাকে আর এই স্থায়ীনিবাসকে (কবর) এড়িয়ে চলছিস। রাজপ্রসাদ থেকে এখানে আসাকে অপছন্দ করছিস যদিও তুই জানিস এটাই তোর শেষ গন্তব্য। এবার বল, আমাদের মধ্যে কে পাগল?
বাহলুলের মুখে এ কথা শোনার পর বাদশাহর অন্তর কেঁপে উঠল, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁর দাড়ি ভিজে গেল।
তিনি বললেন: খোদার কসম! তুমিই সত্যবাদী। আমাকে আরও কিছু উপদেশ দাও!
বাহলুল: তোমার উপদেশের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। তাকে যথার্থভাবে আকড়ে ধর।
বাদশাহ: তোমার কোন কিছুর অভাব থাকলে আমাকে বল, আমি তা পূরণ করব।
বাহলুল: হ্যা, আমার তিনটি অভাব আছে, এগুলো যদি তুমি পূরণ করতে পার তবে সারা জীবন তোমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করব।
বাদশাহ: তুমি নিঃসঙ্কচে চাইতে পার।
বাহলুল: মরণের সময় হলে আমার আয়ূ বৃদ্ধি করতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: আমাকে মৃত্যুর ফেরেশতা থেকে রক্ষা করতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: আমাকে জান্নাতে স্থান করে দিতে হবে এবং জাহান্নাম থেকে আমাকে দূরে রাখতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: তবে জেন রাখ, তুমি বাদশাহ নও বরং তুমি অন্য কারও অধীনস্থ। অতএব তোমার কাছে আমার কোন চাওয়া বা প্রার্থনা নেই।