একজন বোনের একটি স্টেটাস এর জবাব সংক্ষেপে।
সেই বোনের পুরুষ মানুষ নিয়ে অভিযোগপূর্ণ স্টেটাসটি ছিল: “আমরা নারীরা সারা জীবন ভাড়াটে হয়েই থাকলাম। বাপের বাড়ি ভাড়াটে। বরের বাড়িও ভাড়াটে। আর আজকাল নারীরা তো ছেলেমেয়ের কাছে তাদের বাড়ির কেয়ারটেকার। হায়রে জীবন। অথচ এই নারীরা তাদের বাড়িওয়ালাদের জন্য জীবনের সব সুখ ত্যাগ করে। এখানে বাড়িওয়ালা বাবা ও শশুড় বাড়ির লোক আর ছেলেমেয়েরা।”
এই লেখাটি একটি পেইজে আসার পর অনেকেই কমেন্ট করেছেন। তার মধ্যে একজন বোনের কমেন্ট দেখলাম, তিনি লিখেছেন- “মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়াটাই আমাদের পাপ।”
উত্তর: বোন, মানুষ এমন এক সৃষ্ঠি যাকে আল্লাহ চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা দান করেছেন। ভালো মন্দ বুঝার জ্ঞান দিয়েছেন বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্ঠির সেরা হিসেবে আমাদের চিন্তা, চেতনা, বিবেক, বুদ্ধি, কথাবার্তা চাল- চলন সব হবে সেরার মত করে।
বোন, আপনি কেন নিজেকে এত নিচু করে দেখছেন ? আপনি কি একবার চিন্তা করেছেন, আপনি যখন আপনার বাবার বাড়িতে থাকেন তখন আপনার বাবা আপনাকে তার ঘরের রাজকুমারী হিসেবে রাখার চেষ্ঠা করেন। সারা দিন কাজ করে আপনার আবদার পূরণ করেন।
বোন, আপনি কেন নিজেকে এত নিচু করে দেখছেন ? আপনি কি একবার চিন্তা করেছেন, আপনি যখন পূর্ণবয়স্ক হন তখন আপনার বাবা আপনাকে তুলে দেন তার চোখে সবচেয়ে ভালো একটি ছেলের কাছে। এই আপনি যেন স্বামীর ঘরেও সুখে থাকেন এই আশায়। আপনি সেখানে থাকেন রাজকন্য হিসেবে আপনার শশুরের চোখে। রাজরানী হয়ে থাকেন আপনার স্বামীর কাছে।
আপনি বললেন মেয়েরাই তার জীবনের সব সুখ ত্যাগ করে বাবা, স্বামী কিংবা শশুরের জন্য ? তাহলে শুনুন, আপনাকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ বানাতে আপনারই বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন। সারা দিন কাজ শেষে হাতে করে কিছু নিয়ে আসেন তার সেই প্রানপ্রিয় রাজকুমারীর জন্য। এই আপনি যখন অসুস্থ হন তখন সারা রাত বাবার ঘুম হয় না এই আপনার চিন্তায়। আবার এই আপনার বাবাই সকালে একটুও অলসতা না করে সকালে চলে যান কাজে। কারণ তিনি চান রাই এই আদরের মেয়ে সুখে থাকুক।
যেই স্বামীকে আপনি দোষারোপ করলেন, সেই স্বামী আপনাকে সুখে রাখতে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর কাজ করে যান। অনেক স্বামী তার রাজরানী’কে সুখে রাখতে গিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে ঘুষ খেয়ে হলেও আপনাকে সুখে রাখতে চান। যদিও ইসলাম ঘুষ দুর্নীতি সমর্থন করে না। আপনার গরম লাগছে বলে এ.সি কিনে দিচ্ছেন। এই আপনি সারা গায়ে শত শত ভরি গহনা পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথায় পেলেন এত গহনা ? পারবেন দিতে উত্তর ? এই আপনার বাহিরে গেলে যেন রিক্সায় কষ্ঠ না হয় তাই তিনি আপনাকে গাড়ি কিনে দিচ্ছেন।
কেন নিজেকে ভাবতে পারেন না, আপনি আপনার বাবার কাছে রাজকুমারী, শশুরের কাছে রাজকন্য এবং আপনার স্বামীর কাছে রাজরানী।
একটি হাদিস: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ গোটা দুনিয়াই সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো পূর্ণবতী স্ত্রী। (মুসলিম)
এবার আসি যেই বোনটি কমেন্ট করেছেন যে, “মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়াটাই আমাদের ভুল।”
তিনি হয়ত জানেন না হাদিস শরীফে এসেছে, “যখন মহান আল্লাহ খুব বেশি খুশি থাকেন তখন কিছু কাজ করেন তার মধ্যে একটি হলো মেয়ে শিশু মায়েদের দ্বারা জন্ম দেন।”
তাহলে আল্লাহ যেখানে খুশি হয়ে আপনাকে দুনিয়ার জমিনে পাঠালেন সেখানে আপনি বলছেন আপনার জন্ম নেয়া ভুল ছিল। (নাউজুবিল্লাহ)
আপনি কি জানেন, যখন একটি মেয়ে জন্ম নেই তখন সে তার বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়। একটি মেয়ে যখন স্বামীর ঘরে যায় তখন সেই মেয়েটি তার স্বামীর ঈমান পরিপূর্ণ করে দেয়। আবার আপনি যখন মা তখন আপনার ছেলে-মেয়েদের জান্নাত আপনার পায়ের নিচে। একেকটি জান্নাত সাতটি দুনিয়ার সমান আর সেই সাত দুনিয়ার সমান জান্নাত আপনার পায়ের নিচে। মাথায় নয়, পায়ের নিচে।
ইসলাম আপনাদের এত সম্মান দিচ্ছে তারপরেও বলছেন আপনারা অবহেলিত। আপনাদের জন্ম নেয়া ভুল মেয়ে হিসেবে ? তথাকথিত নির্লজ্জ আধুনিকতায় পরে নিজেকে বাবা, শশুর ও স্বামীর কাছে ভাড়াটিয়া মনে করছেন ? নিজেকে সবসময় তাদের কেয়ারটেকার মনে করছেন ?
সবশেষে বলব, আপনাদের বোধ শক্তি ফিরে আসুক। আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্ঠির সেরা হিসেবে চিন্তা- চেতনা, বিবেক- বুদ্ধি, বিচার- বিশ্লেষণ, কথাবার্তা ও চাল- চলন সব হোক সেরার মত করে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ বুঝার তাওফিক দিন।
লিখেছেন: রাকিব খান (১০-১২-২০১৪)