মুসলমনাদের অবস্থা এখন বড়ই খারাপ। কোথাও তারা নিরাপদ নয়। না দেশে, না বিদেশে। ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসী ধর্ম, অসাম্প্রদায়িক ধর্ম আখ্যা দেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে উপর্যুপরিভাবে। ঠিক এমনি সময় মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। মুসলমনদের মাঝে ধর্মীয় কোন্দলের সয়লাব। অথচ এখন সবচে’ প্রয়োজন হল মুসলমানদের মাঝে একতা সৃষ্টি করা। ঐক্যমত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। নবীজী সাঃ এর কালিমায়ে তায়্যিবার প্লাটফর্মে এক হওয়া আজ সময়ের আবশ্যকীয় দাবি।
যখন মুসলমানদের দুশমনরা মুসলমানদের উপর হামলা করে, তখন তারা এটা দেখেনা যে, সে কি দেওবন্দী না বেরেলবী? সে কি মুকাল্লিদ না গায়রে মুকাল্লিদ? সে কি কিয়াম করে না করেনা? সে কি মাজারে যায় কি যায় না? সে ইমামের পিছনে কিরাত পড়ে না পড়েনা?
“লোকটি মুসলমান” কেবল এই অপরাধেই হত্যা করা হয়।
কিন্তু এখন আমরা এই দুঃখজনক বাস্তবতার সম্মুখীন যে, ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটি বারবার সহীহ হাদীস-জাল হাদীস-দুর্বল হাদীসের কথা বলে সহজ-সরলমনা মুসলিমদের ধোঁকা দিচ্ছে। নবীজী সাঃ এর বিশাল হাদিস ভান্ডারকে অস্বিকার করার জন্য কেবল বুখারী মুসলিম আর ক্ষেত্র বিশেষে কেবল সিহাহ সিত্তার হাদিস মানা। এই দাবির মাধ্যমে মুয়াত্তা মালিকের মত স্বীকৃত অসংখ্য সহীহ হাদিসের কিতাবের সহীহ হাদিসকে অস্বিকার করার এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে এই দলটি। এমনকি তারা নিজেদের মতবাদসমূহকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য তাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হিসেবে তৈরী করে চলেছে বেশ কয়েক দশক ধরে। তাদের প্রকাশনী পৃথিবী ব্যপি ছড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই কাজ করার জন্য তাদের সৌদি আরব সরকার ইন্ধন যোগাচ্ছে। আর সৌদি আরবকে এই কাজের জন্য অর্থ দিছে আমেরিকা যা হিলারী ক্লিন্টনের স্বীকারোক্তি থেকেই প্রমানীত।
প্রথমে আগেরকার যুগের নামকরা মুহাদ্দিদ্গণের(হাদীস শাস্ত্রে পারদর্শী যিনি) হাদীস যাচাই বাছাইয়ের কিছু নীতি বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলব। তার আগে কিছু শব্দের অর্থ সম্পর্কে যানা প্রয়োজন যেগুলো অনেকেই জানেন না।
রাবী=যিনি হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদীসের চেইন= একটি হাদীস পাওয়া গেল এভাবে হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) থেকে ক, ক থেকে খ, খ থেকে গ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে ক, খ এবং গ হলেন একজন রাবী। আর “হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) থেকে ক, ক থেকে খ, খ থেকে গ” এটা হল হাদীসের চেইন।
এখন একটি হাদীস বিভিন্ন চেইনে পাওয়া যায়। সেই চেইনের ভিতর থাকেন অসংখ্য রাবী। খোদ বুখারী-মুসলিম শারীফেই দেখা যায় অনেক বার একই হাদীস একাধিক বার এসেছে। এটা হয়েছে একই হাদীসের বিভিন্ন চেইনের কারণে। চেইনের মধ্যে রাবী থাকেন। সেই রাবী হতে পারেন সত্যবাদী অথবা মিথ্যাবাদী। ধরুন একটি হাদীস নিম্নোক্ত কয়েকটি চেইনে পাওয়া গেলঃ
প্রথম চেইনঃ ক-খ-গ-ঘ
দ্বিতীয় চেইনঃ চ-ছ-জ-ঝ
তৃতীয় চেইনঃ ট-ঠ-ড-ঢ
চতুর্থ চেইনঃ ত-থ-দ-ধ
ধরে নিন অক্ষরগুলো হল রাবী। উপরের প্রথম তিনটি চেইনে গ, ছ, ট নামে তিন জন মিথ্যা বাদী রাবী রয়েছেন। কিন্তু চতুর্থ চেইনের সব রাবীগুলোই সত্যবাদী। সুতরাং প্রথম তিনটি চেইনের কারণে হাদীসটি জাল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কিন্তু চতুর্থ চেইনে আসার পর যখন দেখা যাবে সেখানের সব গুলো রাবীই সত্যবাদী তখন সেই জাল হাদীস সহীহ হয়ে যাবে। কারণটা খুব সহজ চতুর্থ চেইনের সব রাবীই সত্যবাদী। যার ফলে অনেক জাল হাদীস অনেক সময় সহীহ হাদীস হয়ে গেছে। এটা হল হাদীস যাচাই-বাছাই এর একটি উপায় মাত্র। এছাড়া আরও অনেক উপায় আছে। আগেরকার যুগের নামকরা মুহাদ্দিসগণ এভাবে অনেক হাদীস যাচাই-বাছাই করে তাদের নিজস্ব সহীহ হাদীস কিতাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আহলে হাদীসেরা যখন কোনো একটি হাদীসকে জাল বলে তখন তারা কেবলমাত্র সেই চেইনটির কথা উল্লেখ করে যেই চেইনটিতে মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছে। সেই চেইনটির কথা তারা গোপন রাখছে যেই চেইনটির সকল রাবীই সত্যবাদী এবং যেই কারণে ঐ হাদীসটি সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। এটা হয় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে না হয় হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে তাদের বা তাদের তথাকথিত নামধারী আলেমদের নূন্যতম কোনো ধারণাই নেই। আবার তারা শুধু তাই বলছে যা তাদের নেতারা শিখাচ্ছে বা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে লিখা আছে। সেটা যাই হোক না কেন এভাবে একাধিক চেইনে প্রাপ্ত হাদীসগুলোর কেবলমাত্র একটা চেইনের কথা উল্লেখ করে যে সহজ-সরলমনা মুসলিমরা প্রতারিত হচ্ছে সেটা তারা আদৌ বুঝতে পারছেন বলে মনে হয় না।
বুখারি-মুসলিম যে সব সহীহ হাদীস নেই এবং এগুলোও ছাড়াও যে আরও অনেক সহীহ হাদীস গ্রন্থ আছে তা দলীল সহকারে এখানে আলোকপাত করা হয়েছেঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/Tarek000/29615892
এবার আসা যাক কিভাবে তাদের প্রকাশনী থেকে সহীহ হাদীসগুলোকে জাল বানাচ্ছে সেই প্রসঙ্গে। এই ঘটনাটি তারা ঘটিয়েছে পাকিস্তানে তাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে। তারা সেখানে সুনান ইবন নাসাঈ গ্রন্থের একটা সহীহ হাদীসের এক জন সত্যবাদী ও বিশ্বাসযোগ্য রাবীর নাম শোয়েব পরিবর্তন করে একজন দুর্বল রাবী সাঈদের নাম বসিয়ে দিয়ে তা প্রকাশ করে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো! স্ক্যান কপিসহ দেখুন এখানেঃ
http://www.islamieducation.com/wahabi-fabrication-in-sunan…/
এভাবে তারা সহীহ হাদীসগুলোকে জাল-দুর্বল বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।
শুধু এটা নয়। ১৯৯৯ সালে সৌদি আরবে দারুস সালাম প্রকাশনী প্রকাশিত ইমাম নববী(রঃ) এর ‘রিয়াদুস সালিহীন’ ও তারা তাদের নেতা নাসিরুদ্দিন আলবানিকে দিয়ে tampering করে। অনেক আলেমও এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেখুনঃ
http://www.livingislam.org/trs_e.html
নিরপেক্ষে মন নিয়ে ভাবুন একবার এটা কত বড় রকমের জালিয়াতি এগুলো! এই সকল ঘটনাটা তারা ঘটাছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তারা এরকমভাবে তাদের প্রকাশনী থেকে আরও কত যে সহীহ হাদীসকে জাল বানিয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই ভাল বলতে পারবেন।
এছাড়াও অনেক সময়ই তারা বলে বেড়ায় ইমাম তিরমিযী(রঃ), ইমাম নাসাঈ(রঃ) হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন হাদীস জাল, সহীহ নয়, রাবী দুর্বল ইতাদি কথাবার্তা। আমি নিজেও তাদের অনেক ওয়েবসাইটে এবং বই এ দেখেছি। তারা এভাবেই হাদীসগুলোকে জাল জাল বলে চালিয়ে দিচ্ছে। শত শত বছর ধরে যেই হাদীস গুলোর উপর আমল করে আসছে বিশ্বের শত শত আলেম সমাজ, কোটি কোটি সাধারণ মুসলিম জনতা। আর আজ এই ১৪শ বছর পর ফিতনা-ফাসাদের যুগে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটি খুঁজে পেল হাদীসগুলো আসলে জাল ছিল। নাকি তাদের প্রকাশনী থেকেই জালিয়াতি করে এসব করা হচ্ছে আর তাদের ওয়েবসাইটে এবং বইগুলোতে তা প্রকাশ করা হচ্ছে? তার সঠিক উত্তর একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সব থেকে ভাল বলতে পারবেন। এরপর নিশ্চয়ই আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে এদের যারা নিয়ন্ত্রণ করছে মানে এদের উপরের স্তরে যারা রয়েছেন তারা যে আসলেই ইসলামের শত্রু। আরও দেখুন তারা কিভাবে ইসলামী বই সহ তাফসীর গ্রন্থসমূহ পরিবর্তন করে চলেছে
https://www.youtube.com/playlist?list=PLCDE309308978D9FD
এটাই মূলত ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীসদের সহীহ হাদীস-জাল হাদিস-দুর্বল হাদীসের কাহিনী। আর ভুলে যাবেন না যেন শিয়া ফিতনার সময় তারা জাল হাদীস তৈরী করেছিল। তাদের হাত থেকে রক্ষা করে নামকরা মুহাদ্দিসগণ হাদীস যাচাই-বাছাই করে একত্র করেছেন। আর আজ ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীসেরা এই শেষ যুগে এসে নিজেদের মতের বিরুদ্ধের সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হাদীস-দুর্বল হাদীস বানাচ্ছেন নিজদের প্রকাশনী থেকে আর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে। আল্লাহ তা’আলা এদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। সুম্মা আমীন।
লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে Islamic Concept of Life পেইজ থেকে।
https://m.youtube.com/#/watch?v=NzQ7emJq8S0&itct=CAYQpDAYCiITCPzl1sLn8MUCFUYJaAod56QAnDIHcmVsYXRlZEj_49vNr4Cb8BE%3D