কারামত দেখে পীর খুজতে যাবেন না।
পীর খুজবেন তার ইলম ও আমল দেখে।
ফেরাউনের কারামত (জাদু বা ক্ষমতা, বুঝানোর জন্য কারামত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে) ছিল আবার দাজ্জালেরও অনেক কারামত (জাদু বা ক্ষমতা) থাকবে। ফেরাউন এক পাহাড়ের গুহায় গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে ক্ষমতা আনত এবং মানুষকে গোমরাহ করার জন্য সেই ক্ষমতা প্রদর্শন করত। সে তার দোয়ায় বলত, “আল্লাহ আমি তো নিজেকে প্রভু বলে ঘোষণা দিয়েছি কিন্তু মানুষ আমার ক্ষমতা দেখতে চায়। আমাকে কিছু ক্ষমতা দান করুন।”
এবার একজন খাটি পীরের কাহিনী বলি।
এক লোক খুব পীর ভক্ত। তিনি মনস্থ করলেন তার জীবন কোনো এক আল্লাহর ওলীর দরবারে খেদমতে নিয়োজিত করবেন। তার এই আশা পূরণ করার স্বার্থে তিনি তার ঘর-বাড়ি, পরিবার পরিজন ছেড়ে এক আল্লাহর ওলীর দরবারে হাজির হলেন। ভাগ্যক্রমে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি পীর সাহেবের খেদমতের মহান দায়িত্ব পেলেন। পীর সাহেবের খেদমতে তার বিন্দুমাত্র অবহেলা নেই।
প্রতিদিন সকালে পীর সাহেব ঘুম থেকে উঠেই উনাকে সামনে পান তিনি খেদমতের জন্য অপেক্ষা করছেন। পীর সাহেব প্রতিদিন সকালে উনাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করেন। তিনি সুন্দরভাবে তার নাম এবং পরিচয় পীর সাহেবের সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু সমস্যা হলো পীর সাহেব প্রতিদিনই তার নাম জিজ্ঞাস করেন। এরকম তিনি দীর্ঘ ১২ বছর পির সাহেবের খেদমত করলেন এবং প্রতিদিনই পীর সাহেবকে তার নাম ও পরিচয় বর্ণনা করতে হলো।
দীর্ঘ ১২ বছর খেদমত করার পর তিনি ভাবলেন, “এটা আবার কেমন পীর? আসলাম পীরের কাছে কিছু কারামত দেখব কিন্তু উনি তো সামান্য আমার নামই মনে রাখতে পারেন না।” পীর ভক্ত লোকটি এসব চিন্তা করতে করতে হঠাত পীরের দরবার থেকে চলে যেতে লাগলেন। তিনি যাবার সময় পীর সাহেব তাকে ডাকলেন এবং তার চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, “আমি খুব পীর ভক্ত মানুষ। আপনার দরবারে দীর্ঘ ১২ বছর খেদমত করলাম কিন্তু আপনি সামান্য আমার নামই মনে রাখতে পারেন না। আমি শুনছিলাম পীররা অনেক কারামত দেখায় কিন্তু আপনার তো কোনো কারামতই দেখলাম না।”
পীর সাহেব তার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “বাবা, বলত তুমি কি এই ১২ বছরে আমার কোনো ফরজ ছুটে যেতে দেখেছ? আমার কোনো সুন্নত, ওয়াজিব কিংবা মুস্তাহাব আমল ছুটতে দেখেছে? জৈনিক ব্যক্তি বললেন, “না, আপনার খেদমতে থাকা অবস্থায় আমি আপনার কোনো ফরজ, সুন্নত, ওয়াজিব বা মুস্তাহাব আমল কিছুই ছুটতে দেখিনি। পীর সাহেব তখন মুচকি হেসে বললেন, “আমি এতই বেশি আমলের মধ্যে থাকি যে আপনার নামটা মনে রাখতে পারি না আর এটাই তো একজন হক্কানী পীরের সবচেয়ে বড় কারামত।” (সুবহান আল্লাহ, আল্লাহু আকবার)
তাই একজন হক্কানী পীর পেতে হলে তার ইলম ও আমল দেখুন। ইলম আর আমল থাকলে একজন পীরের কারামত যথাসময়ে আল্লাহর পক্ষ হতেই প্রকাশিত হবে।
সংকলন: রাকিবুর রহমান খান