একদেশের এক রাজা ছিলেন। রাজা একদিন অনুভব করলেন উনি বৃদ্ধ হচ্ছেন। সিংহাসনের জন্য উনার একজন উত্তরসূরি রেখে যেতে হবে। কিন্তু উনার পুত্র-কন্যা আর মন্ত্রিসভার সবাই ভয়ানক দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল। কার উপর ভরসা করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলেন জনগন হতেই একজন যোগ্য লোক খুঁজে নিবেন।
এরপর কিছু সময় ট্রেনিং দিয়ে রাজ্য চালাবার জন্য উপযুক্ত করে তুলবেন।
পুরো রাজ্য হতে ১৭-১৮ বছর বয়সী হাজারখানেক তরুন-তরুণীকে বাছাই করা হল, এদের মধ্যে রাজার পুত্র-কন্যারাও নিজেদের প্রমান করার সুযোগ পেল ।
ওদেরকে একদিন ডেকে রাজা সবাইকে একটা করে বীজ দিলেন। বললেন, -এটা খুব স্পেশাল একটা বীজ। এটা তোমরা সবাই রোপন করবে, যত্ন নেবে, পানি দেবে। এক বছর পর যার বৃক্ষ সবচেয়ে সুন্দর হবে, সেই এই রাজ্য শাসন করার জন্য নির্বাচিত হবে। সেই পারবে আমার জনগনের ঠিক ভাবে যত্ন নিতে।
সবাই একটা করে বীজ পেল। এদের একজনের নাম ছিল আনিস। আনিস ওর মায়ের সাহায্যে বীজটা রোপণ করল।
অনেক যত্ন নেবার পর ও কোন চারা বের হতে না দেখে আনিস খুব হতাশ হয়ে পড়ল। মাসখানেক পরেই নির্বাচিত অনেকের মুখেই ওদের চারার গল্প শুনতে পেল। কয়েক মাসেই অনেকের চারা বৃক্ষে পরিনত হল। আনিস ভাবছিল, নিশ্চয়ই কোন পাপের ফল এটা। ওর কোন ভুলেই বীজ হতে চারা বের হল না। আনিস ওর ব্যর্থতার গল্প লজ্জায় কাউকে বলতে পারল না।
একবছর পর নির্দিষ্ট দিনে একটা বিশাল মাঠে সবাই যার যার বৃক্ষ তুলে নিয়ে হাজির। আনিস লজ্জায় যেতে চাইল না। ওর মা জোর করে পাঠাল। খালি টব নিয়ে আনিস পিছনের এককোণায় কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল সবার কি সুন্দর সুন্দর সব বিশাল বৃক্ষ। আনিসের খালি টব দেখে অনেকে খুব হাসাহাসি করল, ব্যঙ্গ করল নানাভাবে।
রাজা এসে ঘুরে ঘুরে সবার গাছ দেখলেন, তারিফ ও করলেন অনেক। হটাত রাজার চোখ আনিসের উপর পড়ল। গার্ডদের সাহায্যে আনিসকে মঞ্চে নিয়ে আসা হল। আনিস ভাবল, বীজ মারা যাওয়াতে তার সম্ভবত বড় শাস্তি হতে যাচ্ছে।
রাজা সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে ঘোষণা দিলেন,
– পরবর্তী রাজার নাম – আনিস। তোমাদের সবাইকে একটা করে বীজ দিয়েছিলাম। সেগুলো ছিল সিদ্ধ বীজ যেটাতে কোন চারা বেরই হবে না।
আনিস ছাড়া তোমরা সবাই ফুল, চারা, গাছ এসব নিয়ে হাজির হয়েছ।
তোমরা যখন চারা বের হতে দেখনি, সবাই অন্য বীজ লাগিয়ে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছ। একমাত্র আনিস সাহস আর সততার সাথে তার ব্যর্থতা নিয়ে হাজির হয়েছে। একমাত্র ওর মধ্যেই এই রাজ্য শাসন করার মত নীতি আর চরিত্র আছে।
——————————
– দুনিয়াতে আমরা সবাই এক ধরনের দেখানোর প্রবনতায় লিপ্ত। একসময় আমাদের কর্ম নিয়েই হাজির হতে হবে আল্লাহর কাছে, বাকি রঙ্গিন দুনিয়ার কোন প্রভাব সেই ফলাফলে পড়বে না।
– রাসুল (সাঃ) বলেছেন – সত্যবাদিতা মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যায়। আর সেই পথের শেষ হল জান্নাত। মিথ্যা মানুষকে শয়তানের পথে প্ররোচিত করে, যার শেষ গন্তব্য হল জাহান্নাম। যে সর্বক্ষণ মিথ্যার চর্চা করে, সে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিচিতি পায়। (সহিহ আল বুখারি, খণ্ড ৮:১১৬)