মিলাদ মাহফিল সম্পর্কে একটি আপত্তিঃ
১ম আপত্তিঃ মিলাদ মাহফিল রাসুল (সঃ) এর সময় ছিল না তাই এটা বেদাত
সাধারন মানুষ যাদের ধর্মীয় জ্ঞান কম উপরোক্ত আপত্তির মাধ্যমে তারা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে মুনকির-এ-মিলাদদের ফাঁদে পড়তে পারে। এখানে উপরের আপত্তির যুক্তি খন্ডন করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে মুনকির-এ-মিলাদরা সহজ-সরল মুসলিম নর-নারীদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে। নিমের্ন আলোচনা থেকে বোঝা যাবে মিলাদ মাহফিল সম্পর্কে মুনকির-ই-মিলাদদের দাবী সঠিক নাকি ভুল।
আপত্তির জবাবঃ মোহাম্মদ (সাঃ) ও সাহাবাদের সময়ে প্রতিদিনই মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে হয়তো উদযাপনের ধরনের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বিষয়বস্তু একই তা হলো কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া। (কোরআন ও সুন্নাহ মাহফিল)।
রাসূল (সাঃ) প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে নিজের জন্ম দিবস পালন করতেন। কেন তিনি প্রতি সোমবার রোযা রাখেন এ প্রশ্নের উত্তরে নবীজি (সঃ) বললেন, “আমি জন্মেছি সোমবারে এবং কোরআন নাজিলও হয়েছে সোমবারে” (সহীহ মুসলিম)। যারা মিলাদ মাহফিলের বিরোধিতা করে তারা মেসকাত শরীফের একটি হাদীস উল্লেখ করে যেখানে নবী (সঃ) বলেছেন “যে কেউ আমাদের ধর্মে একটি নতুন ধারনার পরিচয় দেয় যা প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তা বাতিল বলে গন্য হবে।” তিনি আরো বলেন “ নতুন কিছূ থেকে সাবধান, প্রতিটি নতুন কিছুই (কুল্লু বিদাত) ভুল পথে পরিচালিত করে।”
কিন্তু ঐসব ভন্ড মুনকির-ই মিলাদরা কখনো একই বইয়ের অন্য হাদিস উল্লেখ করে না যা নতুন কিছুকে সমর্খন দেয়। মেশকাত শরীফের “বাবুল এলমে” বলা হয়েছে “যিনি ইসলামে একটি সুন্দর (ভাল কাজের) দৃষ্টান্ত রাখবেন তার জন্য রয়েছে সুন্দর পুরষ্ড়্গার পাশাপাশি তারাও পুরৃড়্গত হবেন যারা একাজের অনুসরণ করবে। আর যারা খারাপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবে তারা তার দায় বহন করবে এবং যারা এ কাজের অনুসরন করবে তারাও সে কাজের দায় বহন করবে।” (মেশকাত শরীফের)
এই হাদীস থেকে আমরা ইসলামে কোরআন ও হাদীসের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি নতুন পথের সন্ধান পেতে পারি যা মানুষকে পুরস্ড়্গারের দিকে আগ্রহী করে তোলে।
যদি আমরা মনে করি সব নতুন কিছুই বেদাত তা হলে মুনকির-ই মিলাদরা নিম্নোক্ত নতুন আবিস্ড়্গারের ব্যাপারে কি বলবে যা নবীজি (সঃ) এর সময়ে ছিল না-
-একত্রে ৩০ পাড়া কোরআন
-শুক্রবারে জুম্মায় সানী আজান (খুতবার আগে)
-জামাতে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ
-হাদীস সংকলণ
কিছু ভাল বিদাত আমাদের প্রতিদিনের ধর্মীয় কর্মকান্ডে (বিদাতে হাসানা)
ইসলামে এমন এবাদত খুব কমই আছে যাতে বেদাতে হাসানা নেই। নিম্নের আলোচনা থেকে তা বোঝা যাবে।
ইমানঃ প্রতিটি মুসলিম শিশু ”ঈমানে মোজাম্মেল” এবং ”ঈমানে মুফাচ্ছেল” শিক্ষা করে অথচ এ নামের কোন ঈমানের চর্চা নবী (সঃ), সাহাবা, তাবেইন ও তাবে-তাবেঈনদের যুগে ছিল না।
কলেমাঃ প্রতিটি মুসলমান ৬টি কালিমা মুখস্ত রাখেন। এই ৬ কলেমার গননা, গননার ধরন যেমন ১ম, ২য়, ৩য় ইত্যাদি বলা বেদাত যা ইসলামের শুরুর দিকে ছিল না।
কোরআনঃ কোরআনকে ৩০ পাড়ায় ভাগ করা, পারাকে রুকুতে ভাগ করা, তাতে জের, জবর, পেশ দেয়া, অফসেট কাগজে কোরআনকে মুদ্রিত করা বেদআত যা ইসলামের শুরুতে দেখা যায় নি।
হাদীসঃ বইয়ের আকারে হাদীস সংগ্রহ করা, বর্ণনাকারী রাবীর তালিকা নির্ণয়, হাদিস গুলোকে সহীহ, জয়ীফ, মৌজু, মোয়াল্লাদ ইত্যাদি হিসেবে বিশিস্টায়িত করা, হাদীসের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত নিদের্শ যেমন মাকরুহ, মোস্তাহাব ইত্যাদি সবই বেদাত বলে গন্য হবে যা নবী (সঃ) এর সময়ে ছিল না।
হাদীসের মুলনীতিঃ (উসুল এ হাদীস) জ্ঞানের সব শাখা ও এর নিয়ম সমূহ হল বেদআতে হাসানা।
ফিকহঃ বর্তমান সময়ে আমদের দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই নির্ভর করছে এই জ্ঞানের উপর। কারন এর ভেতরেই আছে জীবনের সবকিছুর নিয়ম ও নির্দেশ। এটিও বেদআতে হাসানা।
উসুলে ফিকহ এবং ইলম-ই কালামঃ জ্ঞানের এই দুইটি শাখা পাশাপাশি এর মূলনীতি ও নিষেধ সমূহ বেদআতে হাসানা।
সালাতঃ নিয়্যত (আবৃতি) করে নামাজ আরম্ভ করা। রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ জামায়াতে পড়া, ইফতারের দোয়া, সেহরির নিয়্যত দোয়া সবই বেদআতে হাসানা।
যাকাতঃ বর্তমানে কাগজের ও ধাতব মুদ্রার মাধ্যমে যে যাকাত দেওয়া হয় তা বেদআত। কারণ ইসলামে শুরুর শতাব্দীতে তা প্রচলিত ছিল না।
হজ্জ্বঃ হজ্জ্ব পালন করতে গিয়ে যান্ত্রিক যানবাহন যেমন উড়োজাহাজ, জাহাজ, বাস, ট্যাস্কি এবং গাড়িতে চড়ে আরাফাতের ময়দানে যাওয়া সবই বেদআত কারণ এসব সুযোগ সুবিধা সমূহ তখন আবিষ্কৃত হয়নি।
বিদাতে হাসানা যখন ইমান ও কলেমা পরিচয় করে দিয়েছে তখন আমরা এসব থেকে দুরে থেকে কি ভাবে সাফল্য লাভ করব। তাই আমাদের একমত হওয়া উচিৎ যে, সকল বেদাতই হারাম নয়। এবং ঐ বেদাত হারাম যার সাথে কোরআন ও সুন্নাহর অসংগতি রয়েছে।
দুনিয়াবী ব্যাপারে বেদআতঃ আমাদের চারপাশে যে সব নতুন আবিষ্ড়্গার দেখি যা ইসলামের প্রথম ৩০০ বছর পর্যন্ত দেখা যায়নি। সেসবের সাথে আমরা এমনই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে সেসব ছাড়া আমাদের জীবন যাপন কঠিন হয়ে পড়বে। প্রত্যেকে ট্রেন, গাড়ী, উড়োজাহাজ, ঘড়ি, বিদুøত এবং অনেক কিছুই ব্যবহার করতে বাধ্য। এগুলো ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না। এ সবই বেদআত যা নবীজি (সঃ) এর সময় বা সাহাবীদের সময় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মুনকির-ই মিলাদরা বর্তমান সময়ে বেদআত সম্পর্কে কি বলবে যা আমাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের অংশ হয়ে গেছে। যেমন জুম্মা ও প্রতিদিনের নামাজে ও বক্তব্য দেওয়ার জন্য স্পিকার ও মাইক্রোফোনের ব্যবহার ।
মসজিদ মাদ্রাসা বানানোর উদ্দেশ্যে হোটেলে রাত্রের খাবার আয়োজন করে অর্থ সংগ্রহ করা
তারা কেন উপরোক্ত নতুন আবিষ্কার সমুহ ব্যবহার করার উপর শিরক, কুফর, বেদাতের ফতোয়া দেয় না যা ইসলামে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা বলা যাবে না যে, মুনকির মিলাদরা স্পিকার ব্যবহার করে না এবং তহবিল বৃদ্ধির অনুষ্ঠানের আয়োজন বা অংশগ্রহন করে না।
আধুনিক সময়ের কিছু খারাপ বেদআত ( বেদআতে সাইয়্যেয়া) যা ইসলাম বিরুদ্ধ যা থেকে দুরে থাকা উচিত। কিন্তু মুনকির মিলাদদের মাধ্যমে যা চর্চ্চা হচ্ছে ফলে দুর্ভাগ্যবশতঃ কিছু নিরীহ মুসলমান বিভ্রান্তিতে পড়ছে।
মাথা অনাবৃত অবস্থায় নামাজ পড়া (টুপি না পড়ে নামাজ আদায়)
নামাজ পড়ে হাত না তুলে দোয়া চাওয়া
চাঁদ না দেখে রোজা শুরু করা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার অগ্রীম ঘোষনা দেয়া
উপরের প্রতিটি কাজই ইসলামের নতুন খারাপ আবিষ্কার যা বেদাতে সাইয়া। কারণ এসব জিনিস গ্রহণ করে একজন ইসলামে নতুন আবিষ্কারের পরিচয়ই করালো না বরং একই সময়ে সে নবীজি (সঃ) সুন্নাহকে অগ্রহ্য করল যা সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ অমান্যের সামিল।