৮. বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (মৃত্যুঃ ৯২৩ হিজরী) বলেন-
“যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের মোবারক মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরে রহমত বর্ষণ করেন। আর উক্ত রাত্রকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে এ জন্য যে, যাদের অন্তরে (নবী বিদ্বেষী) রোগ রয়েছে। তাদের ঐ রোগ যেন আরো শক্ত আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় অন্তর জ্বলে পুড়ে যায়”।
[শরহে জুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬২]
৯. বুখারী শারীফের আরেক অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’ এর লেখক ইমাম ইবন হাজর আসকলানী (রঃ) বলেন-
“মহানবী (দ:)-এর মীলাদ দিবস উদযাপন সম্পর্কে হযরত ইমামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি লিখিতভাবে যে উত্তর দেন তা নিম্নরূপ: “মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপনের উৎস বলতে এটি এমন এক বেদআত (উদ্ভাবন) যা প্রথম তিন শতকের সালাফ আস্ সালেহীন (পুণ্যাত্মাবৃন্দ) কর্তৃক আমাদেরকে জ্ঞাত করানো হয় নি, যদিও এতে প্রশংসনীয় ও প্রশংসনীয় নয় উভয় দিকই বিদ্যমান। কেউ প্রশংসনীয় দিকগুলো গ্রহণ করে প্রশংসনীয় নয় এমন দিকগুলো বর্জন করায় যত্নবান হলে তা বেদআতে হাসানা তথা কল্যাণময় নতুন প্রথা হবে। আর তা না হলে এর উল্টো হবে। এ বিষয়ের বৈধতা প্রতীয়মানকারী একটি নির্ভরযোগ্য শরীয়তের দলিল আমার সামনে এসেছে, আর তা হলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত সহীহ হাদীস যা’তে বর্ণিত হয়েছে যে মহানবী (দ:) মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত করে দেখতে পান সেখানকার ইহুদীরা ১০ই মহররম (আশুরা) তারিখে রোযা রাখেন।”
[’হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’ ৬৩ পৃষ্ঠা]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php…
“এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ:)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা পরিস্ফুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় নামায, রোযা, দান-সদকাহ বা কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ:) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (দ:) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ সারা বছরের যে কোনো সময় (দিন/ক্ষণ) তা উদযাপনকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।”
[‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php…
“আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ:) হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (দ:) নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (দ:) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (দ:) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই, মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (দ:)-এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।”
[‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php…
আমরা এখানে দেখলাম বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারীগণও পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (দঃ) এর পক্ষে ছিলেন। আর তাই আমাদের খুবই জানতে ইচ্ছা করে যারা সারাদিন কিছু হলেই “বুখারী-মুসলিম” বলে চিল্লাচিল্লি করেন তারা কি বুখারী শারীফের ব্যাখ্যাকারীদের থেকেও নিজেদের খুবই পন্ডিত মনে করেন কি না ! ! !
১০. হযরত সাররী সাক্বত্বী (রঃ) বলেন
“যে ব্যক্তি মিলাদ শারীফ পাঠ বা মিলাদুন্নাবী (সাঃ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করল, সে যেন তার জন্য জান্নাতে রওজা বা বাগান নির্দিষ্ট করল। কেননা সে তা হুজুর পাক (দঃ) এর মহব্বতের জন্যই করেছে।”
[আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩]
১১. ১১’শ শতাব্দীর বা সস্রাব্দের মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রঃ) বলেনঃ
دیگر درباب مولود خوانی اندراج یا فتہ بود در نفس قران خواندن بصوت حسن وقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است؟ ممنوع تحریف وتغیر حروف قران است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتبرید صوت باں طریق الحان باتصفیق منا سب انکہ در شعر نیز غیر مبارح است. اگر ہر نہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قران واقع نشود و در قصائد خواندن شروط مذکورہ متحقق نگردد رواں ہم بغرض صحیح تجویز نما یند چہ مانع است؟
অর্থাৎ সুমিষ্ট আওয়াজে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে সুন্দর ক্বাছীদাবলী আবৃত্তি করতে কি বাধা আছে? নিষিদ্ধ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হরফ বা অক্ষর সমূহের মধ্যে পরিবর্তন বা গানের তাল বা ছন্দ অবলম্বন স্বরের উত্থান-পতন যা সাধারণ কবিতার মধ্যেও জায়িয নেই। যদি পবিত্র মীলাদ শরীফ এমনভাবে পড়া হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন আপতিত না হয় এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আবৃত্তির মধ্যে উপরোক্ত গানের ছন্দ বা তালের অনুসরণ করা না হয়, তাহলে এরূপ পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠে কি বাধা আছে ?”
[মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী, ৩য় খন্ড, মাকতুব নং ৭২]
[এটি ধারাবাহিক পোষ্ট। অযাচিত বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো মন্তব্য করার আগে সব পোষ্ট পড়ে নিবেন। ইনশাল্লাহ কোনো না কোনো পোষ্টে উত্তর পেয়ে যাবেন। অযাচিত বা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য এবং কপি-পেষ্ট ডিলিট করা হতে পারে।]