ইয়াযীদী বাহিনী আশি হাজার দিরহামের অনুশোচনা করতে করতে দামেস্কে পৌঁছল এবং ইয়াযীদের দরবারে গিয়ে সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিল। ইয়াযীদ সমস্ত ঘটনা শুনে বলল, ইবনে যিয়াদ খুবই বাড়াবাড়ি করেছে। আমি ওকে এতটুকু করতে বলিনি। এমনকি অনেক কিতাবে লিখা হয়েছে যে, ইবনে যিয়াদের প্রতি ইয়াযীদ লা’নত দিয়েছিল। অর্থাৎ সে বলেছিল, আল্লাহ তায়ালা ইবনে যিয়াদের উপর লা’নত করুন। ইবনে যিয়াদ খুবই অত্যাচার করেছে, আমার উদ্দেশ্য তা ছিল না। আমার উদ্দেশ্য ছিল, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামকে যেন নজর বন্দী করে রাখা হয়, যাতে লোকেরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে। কিন্তু এ ধরনের কথার দ্বারা ইয়াযীদ রেহাই পেতে পারে না। যা কিছু হয়েছে ইয়াযীদের ইঙ্গিতেই হয়েছে। সে ইবনে যিয়াদকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করেছিল যেন সে যা প্রয়োজন হয়, তা করে। যাতে তার বিরুদ্ধে গড়ে উঠা বিদ্রোহ দমন হয়ে যায়। ইয়াযীদ ভনিতাপূর্ণ দরদমাখা কথা-বার্তা এজন্যে বলেছিল, যাতে লোকজন তার বিরুদ্ধে চলে না যায় এবং লোকেরা যেন মনে করে, সে এ ধরনের আচরণ করার পক্ষপাতি ছিল না। এসব কথার কারণে অনেক লোক ইয়াযীদকে ভাল বলে আখ্যায়িত করে তাদের রচিত কিতাবে লিখেছে যে, ‘ইয়াযীদ এ শাহাদাতে রাজী ছিল না। সুতরাং, ইয়াযীদ নয় বরং ইবনে যিয়াদই এ ঘটনার জন্য দায়ী।’
মূলতঃ এ ঘটনার জন্য ইয়াযীদই দায়ী ছিল। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘কিতাবুল আক্বায়িদ’-এ লিখা হয়েছে, ইয়াযীদের উপর, ইবনে যিয়াদের উপর, আহলে বাইত-এর সদস্যগণের শহীদকারীদের উপর লা’নত বর্ষিত হোক। যদি ইয়াযীদ নির্দোষ ও নিষ্পাপ হতো তাহলে হযরত ইমাম নাসাফী আলাইহিস সালাম তাঁর ‘কিতাবুল আক্বায়িদ’-এ এ ধরনের কথা কখনও লিখতেন না। আর ইয়াযীদের পরবর্তী পদক্ষেপে তার আসল রূপ আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতকিছু বলার পরও সে শহীদগণের মস্তক মুবারক গুলোকে রাতে রাষ্ট্রীয় ভবনের শাহী দরজায় টাঙ্গানোর জন্য এবং দিনে দামেস্কের অলিতে-গলিতে ঘুরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দেশ মত মস্তক মুবারকসমূহ দামেস্কের অলি-গলিতে ঘুরানো হয়েছিল।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মিনহাল বিন্ আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, খোদার কসম! আমি স্বচক্ষে দেখেছি যে, যখন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবারক বর্শার অগ্রভাগে উঠিয়ে দামেস্কের গলিতে এবং বাজারসমূহে ঘুরানো হচ্ছিল, তখন মিছিলের আগে আগে এক ব্যক্তি কুরআন শরীফ-এর সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিল। যখন সে এ আয়াতে কারীমা-
ام حسبت ان اصحاب الكهف والرقيم كانوا من ايتنا عجبا
অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আছহাবে কাহাফ ও রক্বীম আমার নিদর্শনসমূহের মধ্যে এক আশ্চর্যজনক নিদর্শন ছিল’ (সূরা কাহাফ-৯) পাঠ করছিল তখন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বিচ্ছিন্ন মস্তক মুবারক থেকে আওয়াজ বের হলো- اعجب من اصحاب الكهف قتلى وحملى অর্থাৎ ‘আছহাবে কাহাফ-এর ঘটনা থেকে আমার শাহাদাত এবং আমার মস্তক নিয়ে ঘুরাফেরা আরও অধিক আশ্চর্যজনক।’ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান- ولاتقولوا لمن يقتل فى سبيل الله اموات ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত বলো না।’ (সূরা বাক্বারা-১৫৪) হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মস্তক মুবরাক তা প্রমাণ করে দিল।
আপত্তি : অনেকে ইবনে তাইমিয়ার বক্ত্যব্য দিয়ে প্রমান করতে চাই ইয়াজিদ ছডি দিয়ে ইমাম পাকের দাত মোবারকে টোকা মারার কথা টি ভুল ! আরো বলে থাকে ঘটনাটি ইবনে যিয়াদের। (আরো বলে থাকে ঘটনাটি ইবনে যিয়াদের , মূলত ইতিহাস থেকে উভই এই ধরনের ঘটনার প্রমান পাওয়া যায়।)
জবাব : ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইবনে কাছির বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ~ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ” ৮ম খন্ড , তিনি বলেন ইমাম পাকের মস্তক মোবারক যখন ইয়াজিদের সামনে রাখা হয় তখন ইয়াজিদ ইমাম পাকের দাত মোবারকে চডি দিয়ে অব্বৃতি করেন -~ আমাদের তলোয়ার এমন লোকের খুলি উডিয়ে দিয়েছে যারা আমাদের ছেয়ে প্রভাব শালী ও সম্মানিত ,কিন্তু ওনারা ছিল অবাধ্য এবং জালিম।
তা দেখে উপস্থিত সাহাবী আসলামী বলে উঠেন – খোদার কসম তুমি তোমার চডি এমন জায়গায় রাখতেছে যেইখানে আমি মহানবী (দ:) কে চুমু খেতে দেখেছি ,এই বলে তিনি বের হয়ে গেলেন।
২, এই বর্ণনাটি তিনি অন্য সনদে হজরত জাফর থেকে বর্ণনা করেন।
৩, একই ঘটনা তিনি অন্য সনদে হাসান বসরী থেকে বর্ণনা করেন।
সুত্র : তারিখে তাবারী ২৬৭/৬, ইবনে আসীর ৩৫/৪ ,সোহিবে মুসরিকা ৯৭