জাল হাদীস আর জয়ীফ হাদীসের মধ্যে পার্থক্য:
লা মাজহাবী কথিত আহলে হাদীসরা মানুষের মগজে এই কথাটা ঢুকিইয়ে দিতে চায় যে, জয়ীফ হাদীস এটা কোন হাদীসই না। জয়ীফ হাদীস জাল হাদীসের মতই। তারা জয়ীফ হাদীসগুলো কে জাল হাদীস বলে অসংখ্য হাদীস কে অস্বীকার করছে। অথচ জাল আর জয়ীফ হাদীসের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।
হাদীস সহীহ হয়, জয়ীফ হয়, হাসান হয়, সনদের উপর ভিত্তি করে। মুহাদ্দিসগন যখন কোন হাদীসের রাবী (হাদীস বর্নণাকারীর) নাম পরিচয়,আমল আখলাক ইত্যাদি যাচাই- বাছাই করেন এর উপর ভিত্তি করে হাদীসের মান নির্নয় করা হয়।
এমন অনেক হাদীস আছে যেই হাদীসগুলো ইসলামের প্রাথমিক জামানাতে সহীহ শুদ্ধ ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে সনদের কারনে সেই হাদীসের মান দুর্বল হয়েছে। তাই বলে জয়ীফ দুর্বল হাদীসকে জাল হাদীস বলার কোন সুযোগ নেই। সমস্ত মুহাদ্দীসগন একমত যখন কোন বিষয়ে একাধিক জয়ীফ হাদীস থাকে তখন ওই হাদীস সহীহ হাদীসের পর্যায়ে চলে যায় এবং ফাযায়েলের বিষয়ে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা যায়।
আর জাল হাদীস এটা তো কোন হাদীসই না এজন্যই তো এটা জাল। মুহাদ্দীসগন যখন হাদীস গ্রহন করেন অনেক সময় এমনও হয়, যার কাছ থেকে হাদীস শুনছেন তার স্মরন শক্তি হয় তো কম, তাই হাদীস টা সম্পুরনভাবে পৌছাইতে পারে নাই তাই এখানে সতর্কতা স্বরুপ হাদীসের মান দুর্বল রাখা হয়েছে।
একারনেই দেখবেন একই রকমের হাদীস এক রেওয়ায়েতে একভাবে আরেক রেওয়ায়েতে কিছু কম বেশি হয়ে আসছে।
জাল আর জয়ীফের পার্থক্য একটা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি।
ধরুন, দুই জন অসুস্থ মানুষ পাশাপাশি বেডে (খাট) শোয়া একজন মারা গেলো আর আরেক জন মারা যায় নাই। যে মারা গেছে তাকে সবাই কী বলে? লাশ আর যেই লোক অসুস্থ তাকে সবাই মানুষই বলে। কারন তার ভিতর এখনও জান (প্রান) আছে।
ঠিক এমনই যেই হাদীস জাল এটা লাশের মত এটা কোন হাদীসই না কিন্তু যেই হাদীস জয়ীফ সেটা হাদীস।
মুহাদ্দীসগন তাদের কিতাবে সেই হাদীস উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দু:খের বিষয় কথিত আহলে হাদীসদের শায়খ নাসের উদ্দিন আলবানী তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফের যয়ীফ হাদীসগুলো আলাদা করে দুইটা কিতাব বাহির করছে। সহীহ আবু দাউদ ও যয়ীফ আবু দাউদ, সহীহ তিরমিযী ও যয়ীফ তিরমিযী।
কেমন যেন বুঝাতে চাচ্ছে যে, যয়ীফ হাদীস এটা কোন হাদীসই না। হাদীস সহীহ না হওয়া কে বাতিল গণ্য করা হচ্ছে এবং আমলের অনুপযোগী মনে করা হচ্ছে এবং মূলত হাদীসকে অস্বীকার করা হচ্ছে। শুধু সহীহ হাদীস মানার কথা বলে তারা ইসলাম কে অপরিপুর্ন, সংকীর্ন করছে এবং অসংখ্য হাদীসকে এনকার (অস্বীকার) করছে।
আর মজার বিষয় হল তারা তাদের সুবিধামত আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সহীহ হাদীসকে যয়ীফ বলে আর তাদের পক্ষে অনেক যয়ীফ হাদীস কে সহীহ বলে চালিয়ে দেয়।
আল্লাহ তায়ালা এদের ধোকাবাজী ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের ঈমান-আমল কে হেফাজত করেন, আমিন।