হাসান সাহেব এইবার কুরবানির ঈদে এক লাখ টাকা খরচ করে এক বিশাল সাইজের নাদুস নুদুস গরু কিনেছেন। গতবার ঈদে তার খুবই গায়ে লেগেছে যে, তার প্রতিবেশী সিরাজ সাহেবের গরুটার পাশে তার গরুটাকে খাসির মতো দেখাচ্ছিল। এইবার তিনি এক প্রকাণ্ড গরু কিনে হাট থেকে ফিরছেন, আর মনে মনে বলছেন, “আল্লাহ, এবার অনেক বড় গরু কিনেছি যাতে করে সারাদিন ধরে মানুষের মাঝে বিলাতে পারি। আমাকে বেশি করে সওয়াব দিয়েন।” এভাবে সে আল্লাহ্কেﷻ বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, সে আসলে আল্লাহ্কে ﷻ খুশি করার জন্যই বড় গরু কিনেছে।
মসজিদের মিটিঙে এবার আহমেদ সাহেবকে সভাপতি করা হলো। আহমেদ সাহেব খুশি মনে বাড়ি ফিরে গেলেন। ভোরে ফজরের নামাযের সময় আজান শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর তিনি লাফ দিয়ে উঠলেন, “হায় হায়, জামাত শেষ হয়ে গেল নাকি। আমি এখন সভাপতি! আমি যদি এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে না পড়ি, তাহলে কেমন দেখায়!” তারপর তিনি তাড়াতাড়ি উঠে মসজিদের দিকে হাটা দিলেন আর মনে মনে বললেন, “আল্লাহ, আজ থেকে আপনার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে পড়া শুরু করলাম। আমাকে এই চেষ্টা কবুল করেন এবং সারাজীবন এই মসজিদের সভাপতি হয়ে থাকার সৌভাগ্য দিয়েন।” এভাবে সে আল্লাহ্কেﷻ বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, সে আল্লাহ্রই ﷻ জন্য ফজরের নামায জামাতে গিয়ে পড়া শুরু করছে।
শুক্রবার, ঘড়িতে একটা বাজে। মায়ের ডাকাডাকি শুনে অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও কম্পিউটার থেকে উঠে বল্টু জুম্মার নামায পড়তে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় ভাবছে, “ধুর, গেমটা শেষ করে আসতে পারলাম না। আর বিশটা মিনিট পেলেই গেমটা শেষ হয়ে যেত। কিন্তু শুক্রবারে জুম্মার নামায না পড়লে আবার কেমন দেখায়। সপ্তাহে একটা দিন তো ঠিকমত নামায পড়া দরকার। না হলে আবার আল্লাহ্ কি শাস্তি দেন।” তারপর সে মসজিদে গিয়ে একদম দরজার পাশে মানুষের স্যান্ডেল যেখানে থাকে, সেখানে গিয়ে বসে, যেন নামায শেষে সালাম ফেরানোর সাথে সাথে সবচেয়ে কম সময়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এভাবে সে আল্লাহ্কেﷻ বোঝানোর চেষ্টা করে যে, সে আসলে আল্লাহ্কে ﷻ খুশি করার জন্যই মসজিদে এসেছে।
উপরের তিন ধরনের মানুষ এক ধরণের মানসিক রোগে ভোগে, যাকে Self Delusion বলা হয়। এধরণের মানুষ নিজেদেরকে সবসময় বোঝায় যে – তারা একমাত্র আল্লাহর ﷻ সন্তুষ্টির জন্যই কাজ করে যাচ্ছে – কিন্তু আসলে তাদের কাজের আসল উদ্দেশ্য থাকে অন্য কিছু। এধরণের মানুষরা প্রায়ই নিজেদের মনে মনে বলে, “আল্লাহ, আপনার জন্যই এটা করলাম কিন্তু। আমাকে আখিরাতে এর প্রতিদান দিয়েন।” শুধু তাই না, তারা মানুষকেও এধরণের কথা বলে বেড়ায়, “ভাই, আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে দশ হাজার টাকা দান করলাম, আমার জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করবেন, যেন আপনাদের আরও খেদমত করতে পারি।”
মুনাফিকদের মনের ভিতরে আসলে কি কাজ করে, সেটা আল্লাহ্ﷻ আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেনঃ
“তারা আল্লাহ এবং বিশ্বাসীদের ধোঁকা দিতে চায়। তারা আসলে নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয়, যদিও তারা তা উপলব্ধি করে না।”[বাকারাহ-৯]
এই আয়াতটিতে একটি চিন্তা করার মতো ব্যাপার রয়েছে। মুনাফিকরা আল্লাহকে ﷻ ধোঁকা দিতে চায়, তার মানে হলো তারা ঠিকই জানে আল্লাহ ﷻ আছেন। কিভাবে একজন মানুষ জেনে শুনে সৃষ্টিকর্তার মতো একজন প্রচণ্ড শক্তিশালী সত্ত্বাকে ধোঁকা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারে? একজন মানুষের মাথায় কিছুটা হলেও যদি বুদ্ধি থাকে তাহলে তার বোঝা উচিত যে, আল্লাহকে ﷻ ধোঁকা দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।