হযরত উমর (রা) ইসলাম গ্রহণ করেই জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা কত?” মহানবী (সা) উত্তর দিলেন, “তোমাকে নিয়ে চল্লিশ জন।” উমর বললেন, “এটাই যথেষ্ঠ। আজ থেকে আমরা এই চল্লিশ জনই কা’বা গৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে আল্লাহর ইবাদত করব। ভরসা আল্লাহর। অসত্যের ভয়ে আর সত্যকে চাপা পড়ে থাকতে দেব না।”
মহানবী (সা) হযরত উমরের এই সদিচ্ছার উপর হৃষ্টচিত্তে আদেশ দিলেন। হযরত উমর (রা) সবাইকে নিয়ে উলঙ্গ তরবারি হাতে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিতে দিতে কা’বা প্রাঙ্গণে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
মুসলিম দলের সাথে হযরত উমর (রা)-কে এভাবে কা’বা প্রাঙ্গণে দেখে উপস্থিত কুরাইশগণ যারপর নাই বিস্মিত ও মনোক্ষুন্ন হয়ে পড়লো। তাদের মনোভাব দেখে হযরত উমর (রা) পৌরুষকন্ঠে গর্জন করে বললেন, “আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি, কোন মুসলমানের কেশাগ্র স্পর্শ করলে উমরের তরবারি আজ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে উত্তোলিত হবে।”
কা’বায় উপস্থিত একজন কুরাইশ সাহস করে বলল, “হে খাত্তাব পুত্র উমর, তুমি কি সত্যই মুসলমান হয়ে গেলে? আরবরা তো কদাচ প্রতিজ্ঞাচ্যুত হয় না। জানতে পারি কি, তুমি কি জিনিস পেয়ে এমন ভাবে প্রতিজ্ঞাচ্যুত হলে?”
হযরত উমর উচ্চকন্ঠে জবাব দিলেন, “মানুষ যার চেয়ে বেশী পাওয়ার কল্পনা করতে পারে না, আমি আজ তেমন জিনিস পেয়েই প্রতিজ্ঞাচ্যুত হয়েছি। সে জিনিস হল আল কুরআন।”
হযরত উমর (রা)-এর এরূপ তেজোদীপ্ত কথা শুনে আর কেউ-ই কোন কথা বলতে সাহস পেলো না। বিমর্ষ চিত্তে কুরাইশরা সবাই সেখান থেকে চলে গেল।
অতঃপর মহানবী (সা) সবাইকে নিয়ে কা’বা ঘরে নামায আদায় করলেন। সেখানে মুসলমানদের এটাই প্রথম নামায। এর আগে মুসলমানরা অতি গোপনে ধর্ম কাজ করতেন। পোশাক-পরিচ্ছদের পার্থক্যও রক্ষা করতে পারতেন না। এজন্য কে মুসলমান, কে পৌত্তলিক তা চিনবার উপায় ছিল না। এ ঘটনার পর মুসলমানরা পোশাক-পরিচ্ছদ ও ধর্ম কর্মে পৃথক সম্প্রদায়রূপে পরিগণিত হলেন। এ ঐতিহাসিক পরিবর্তন উপলক্ষে মহানবী (সা) হযরত উমরকে ‘আল ফারুক’ উপাধিতে ভূষিত করলেন।