পবিত্র কালাম পাকে মোট ২৭ জন মতান্তরে ২৯ জন নবী রাসূলের বর্ণনা এসেছে। কোন কোন নবী রাসূলের উম্মতের মধ্যেও কারো কারো আলোচনা এসেছে। উদাহরণতঃ সূরা ইয়াসীনে উল্লিখিত হাবীব নাজ্জার। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর লক্ষাধিক সাহাবী (রাযি.) গণের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারো নাম পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত হয়নি। শুধুমাত্র একজন ভাগ্যবান সাহাবী (রাযি.) এর নাম পবিত্র কালামে উল্লিখিত হয়েছে। তাঁর নাম হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রাযিঃ)। সূরা আহযাব-এর ৩৭ নং আয়াতে উদ্ধৃত হয়েছেন তিনি।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَاهُ ۖ فَلَمَّا قَضَىٰ زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا
অনুবাদঃ আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোক নিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে।
তিনি প্রাথমিক জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নুবুওয়্যাতের পূর্বে আরবের প্রসিদ্ধ বাজার “ওকায” থেকে তাঁকে বাল্যকালে অতি অল্প মূল্যে খরিদ করেন এবং পরবর্তিতে মুক্ত করে দেন। কিন্তু তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছেড়ে যেতে রাজি হননি। অতঃপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পোষ্য পুত্র হিসেবে বরণ করে লালন পালন করেন। তখন হযরত যায়েদ (রাযিঃ) কে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুত্র বলেই ডাকা হত।
আমরা জেনেছি যে, হযরত যায়েদ (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পালক পুত্র ছিলেন। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, তোমাদের পোষ্য পুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ্ ন্যায় কথা বলেন এবং সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহ্ কাছে ন্যায় সঙ্গত। যদি তোমরা পিতৃ পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধু রূপে গন্য হবে। [ সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৪-৫ ]
উক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পর হযরত যায়েদ (রাযিঃ) কে তাঁর পিতৃ পরিচয়ে ডাকা শুরু হয়। হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাযিঃ) গণ যাঁরা তাঁকে যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামে ডাকতেন, তাঁরাই তাঁকে যায়েদ ইবনে হারেস (রাযিঃ) নামে ডাকা শুরু করেন।
হযরত যায়েদ (রাযিঃ) এর নাম পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত হওয়ার তাৎপর্য বর্ণনায় কেউ কেউ বলেন যে, কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর পুত্রত্বের সর্ম্পক ছিন্ন করে দেয়ার ফলে এক বিশেষ সম্মান থেকে তিনি বঞ্চিত হন। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালাম পাকে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করে এরই বিনিময় প্রদান করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করতেন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিঃ) এরশাদ করেন যে, যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রাযিঃ) কে কোন সৈন্যবাহিনী ভুক্ত করে পাঠিয়েছেন, তাঁকেই সেনাপতি নিযুক্ত করেছেন। [ তাফসীরে ইবনে কাসীর ]