প্রশ্নঃ পীরের প্রয়োজনীয়তা কি? এবং খাঁটি পীরের পরিচয় কি?
যাহেরী আমল তথা দেহের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত আমল ও তার মাসআলা-মাসায়িল শিক্ষা করার জন্য শিক্ষকের প্রয়োজনব হয়, এটাই নিয়ম। উস্তাদ ছাড়া এবস কাজ সঠিকভাবে হয় না। কিন্তু বাতেনী আমলের ফরয, ওয়াজিব, হারাম, মাকরূহ- যেগুলো তাসাউফ ও ত্বরীকতের মধ্যে বর্ণনা করা হয়। সেগুলোর ইল্ম হাসিল করা এবং সে অনুপাতে আমল করার জন্য উস্তাদের প্রয়োজন তার চেয়েও অধিক। এ সমস্ত বিষয়ের উস্তাদকে পরিভাষায় শাইখ, মুরশীদ বা পীর বলা হয়। আধ্যাত্মিক ব্যধি ও মন্দ চরিত্রসমূহ বোঝা এবং সেগুলোর চিকিৎসা ও সংশোধন করা সাধারণতঃ পীর বা মুরশীদ ছাড়া সম্ভব হয় না। তাই যে ব্যক্তি এ পথে পা রাখবে, তার জন্য মুরশীদের সন্ধান করা জরুরী। সন্ধান করে এ ধরণের পীর পেলে, তাঁর শরণাপন্ন হবে এবং পরিপূর্ণরূপে তার শিক্ষা ও নির্দেশনা মেনে চলবে। কেউ যখন পীরের শিক্ষা বা ছবকানুযায়ী আমল করতে আরম্ভ করবে, তখন সে নিজেই বুঝতে পারবে যে, নিজের যাহেবী ও বাতেনী আমল ছহীহ করতে জায়গায় জায়গায় পীর ও মুরশিদের প্রয়াজন পড়ে। একজন কামিল পীরের পথপ্রদর্শন ছাাড়া তওবা ইত্যাদি পরিপূর্ণ হওয়া জটিল ব্যাপার।
খাঁটি/কামেল পীরের পরিচয়ঃ
খাঁটি পীর বা হেদায়াতের পথ প্রদর্শক হওয়ার জন্য ১০টি শর্ত রয়েছে। যেই পীরের মধ্যে এই ১০টি শর্তের ১টিও পাওয়া যাবেনা, তাহলে বুঝতে হবে সে কখনই আহলে হক হতে পারেনা। তার কাছে গেলে মানুষ কখনই সীরাতে মুস্তাকিমের পথ খুঁজে পাবেনা এবং নিজের আত্মাও পবিত্র হবেনা।
শর্তগুলি হচ্ছে
০১। পীর সাহেব তাফসীর, হাদীস, ফিক্হ ও ধর্মীয় যাবতীয় ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলিম হওয়া আবশ্যক। অন্ততঃপক্ষে মিশকাত শরীফ ও জালালাইন শরীফ বুঝে পড়েছেন, এমন পরিমাণ ইল্ম থাকা জরুরী।
০২। পীরের আক্বীদা এবং আমল শরীয়তের মু’আফিক হওয়া অপরিহার্য। তার স্বভাব-চরিত্র ও অন্যান্য গুণাবলী শরীয়ত যে রকম চায়, সে রকম হওয়া বাঞ্ছনীয়।
০৩। পীরের মধ্যে লোভ ( টাকা-পয়সা, সম্মান-প্রতিপত্তি, যশঃ ও সুখ্যাতির লিপ্সা) থকবে না। নিজের পক্ষ থেকে কামেল হওয়ার দাবী করবে না। কেননা, এটাও দুনিয়ার মহব্বতেরই অন্তর্ভুক্ত।
০৪। তিনি উপর ও নিম্নোল্লেখিত সকল গুনের অধিকারী, এমন একজন কামেল পীরের খিদমতে থেকে ইসলাহে বাতেন (আত্মশুদ্ধি করেছেন) এবং তরীক্বত অর্জন করেছেন, এমন হতে হবে।
০৫। সমসাময়িক পরহেযগার-মুত্তাকী আলেমগণ এবং সুন্নত ত্বরীকার ওলীগণ তাঁকে ভালো বলে মনে করতে হবে।
০৬। দুনিয়াদার অপেক্ষা দ্বীনদার লোকেরাই তাঁর প্রতি বেশি ভক্তি রাখে, এমন হওয়া আবশ্যক।
০৭। তার মুরীদের মধ্যে অধিকাংশ এরকম হতে হবে যে, তারা প্রাণপণে শরীয়তের পাবন্দী করেন এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ-লালসা রখেন না।
০৮। তিনি এমন হবেন যে, মনোযোগের সাথে মুরীদদের তা’লীম তালকীন করেন এবং অন্তর দিয়ে এটা চান যে, তারা আল্লাহ্ ও রাসূল স. এর পায়রবী করুক। মুরীদদের স্বাধীন ভাবে ছেড়ে দেন না এবং তাদের মধ্যে যদি কোন দোষ দেখতে বা শুনতে পান, তবে তা যথারীতি (কাউকে নরমে কাউকে গরমে) সংশোধন করে দেন।
০৯। তাঁর সুহবতে কিছু দিন যাবৎ থাকলে, দুনিয়ার মহব্বত কমে যায় এবং আখেরাতের চিন্তা-ফিকির বাড়তে থাকে, এমন হতে হবে।
১০। তিনি নিজেও রীতিমত যিকির করেন, তিলাওয়াত করেন, সাধারণ সুন্নতও ইচ্ছাকরে বাদ দেন না, অন্ততঃপক্ষে করার পাক্কা ইরাদা রাখেন (কেননা, নিজে আমল না করলে, পাক্কা ইরাদা না থাকলে, তা’লীম-তলকীনে বরকত হয় না) এবং মুরীদদেরকেও এর উপর তাগীদ দিয়ে থাকেন।……… [প্রমাণঃ-কসদুস সাবীল, পৃঃ৯]
আমরা যদি এতগুলো শর্ত স্বরণ রাখতে নাও পারি, তাহলে সহজে হক-বাতিল চিনার আরো একটি উপায় আছে। আর তা হল, যে পীরের কাছে বে-নামাজী গেলে নামাজী হয়, বে-রোজাদার গেলে রোজাদার হয়, বে-পর্দাওয়ালা গেলে পর্দাওয়ালা হয়।