সব অশুভকে তুচ্ছ করে বিতাড়নের অঙ্গীকারে সকলের মঙ্গল কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা !! কথা হচ্ছে অশুভ শক্তিটাই বা কি আর সেটা বিতারনের উপায় কি ??
পহেলা বৈশাখ আমাদের বাংলা সালের প্রথম দিন। ঐতিয্যগতভাবেই এদিনটি আমাদের জাতীয় উতসবের দিন। আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়।পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে থাকে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তির।
আস্তে আস্তে এ প্রানের উতসবে যোগ হতে থাকে ঢাকায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার জন্য বানানো নয় রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। উদ্দেশ্য: সব অশুভকে তুচ্ছ করে বিতাড়নের অঙ্গীকার !!!
পহেলা বৈশাখ পালনের অন্যতম শিরক হচ্ছে কথিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করা হয়।
আল্লাহ্ বলেন- “শুনে রাখ তাদের অশুভ আলামতের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহরই হাতে রয়েছে, অথচ এরা জানে না। (৭।সূরা আঽরাফ:১৩১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- হে আল্লাহ্ তুমি ছাড়া কেউ কল্যাণ দিতে পারে না, তুমি ছাড়া কেউ অকল্যাণ ও দুরবস্থা দূর করতে পারে না। ক্ষমতা ও শক্তির আধার একমাত্র তুমী। (আবু দাউদ: ৩৯১৯)
আমরা বাঙ্গালী জাতি। আমাদের অনেকের আরো একটা পরিচয়, আমরা মুসলিম জাতি । জাতিগত, ধর্মীয় উভয়ের সাথে সাংঘর্ষিক “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নামক শিরক থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
আমরা জাতিগত উৎসব পহেলা বৈশাখ ঐতিয্যগত ধারার মাধ্যমে উদযাপন করবো। কোন নব্য আবিষ্কৃত, বিজাতীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে নিজে দূরে থাকবো, মুসলিম ভাই-বোনদের বিরত রাখবো।
সংকলন: রাকিবুর রহমান খান