আমরা যখন নামাযে দাঁড়াই, তখন আমাদের মনের ভেতরে যে চিন্তা গুলো চলতে থাকে সেটাকে যদি কথায় প্রকাশ করা যায়, তাহলে তা দেখতে হবে অনেকটা এরকমঃ
আলহামদু লিল্লাহি … দেশের কি অবস্থা, চারিদিকে মারামারি, খুনাখুনি … মালিকি ইয়াওমিদ্দিন … আহ্ হা, গতকালকে পরীক্ষায় তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর তো ভুল লিখে এসেছি … ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা … মোরা একটি দেশকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি ♫… কুল হু আল্লাহু আহাদ … আজকে মুরগি আর সবজি করবো, আর কিছু করতে ইচ্ছা করছে না … আল্লাহু আকবর … এটা কি দুই নম্বর রাকাত না তিন নম্বর? … সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ … ওহ্ হো, নামাযে নিয়ত করতে তো ভুলে গেছি, যাকগে কিছু হবে না … আল্লাহু আকবর …
আমাদের বেশিরভাগেরই নামায পড়তে দাঁড়ালে এমন কোনো দুনিয়ার চিন্তা নেই, যেটা আসেনা। একজন একাউন্টেন্ট তার কঠিন সব হিসাব নামাযে দাঁড়িয়ে সমাধান করে ফেলেন। একজন প্রোগ্রামার তার প্রোগ্রামের বাগ গুলো ঠিক করে ফেলেন নামাযে দাঁড়িয়ে। একজন ডাক্তার কিভাবে অপারেশন করবেন, তার রিহার্সাল করে ফেলেন নামাযে দাঁড়িয়ে। আর তারপরে আমরা ভাবি, নামায পড়ে আমার তো কোনো লাভ হচ্ছে না! আমার ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ তো তেমন বাড়ছে না! এতো বার নামাযে আল্লাহ্র কাছে চাচ্ছি, তাওতো কিছু পাচ্ছি না। নামায পড়ে আসলেই কি কোনো লাভ হয়?
পড়, যা তোমাকে এই কিতাবে প্রকাশ করা হয়েছে, নামায প্রতিষ্ঠা কর, নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে… [আনকাবুত ২৯:৪৫]
নামায মানুষকে অশ্লীল কাজ এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখবে, এই গ্যারান্টি আল্লাহ্ আমাদেরকে দিয়েছেন। এখন নামায পড়ে আপনি যদি অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে না পারেন, অন্যায় কাজ করা বন্ধ করতে না পারেন – তাহলে আপনি যা করছেন সেটা সত্যিই নামায, না কার্ডিও-ভাস্কুলার এক্সারসাইজ, সেটা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন।
কেন নামাযে দাঁড়ালেই আমাদের মাথায় পৃথিবীর যাবতীয় চিন্তা চলে আসে?
কারণ আমরা নামায শুরু করে দেই কোনো ধরণের প্রস্তুতি ছাড়াই। পরীক্ষা দেবার আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রস্তুতি নেই। পরীক্ষার হলে এক ঘণ্টা আগে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। মন শান্ত করি, যাতে পরীক্ষার সময় অন্য কোন চিন্তা মাথায় না আসে এবং সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিতে পারি। কিন্তু আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার আগে কোনো প্রস্তুতি নেই না। কাজ করতে করতে হঠাৎ করে উঠে ওজু করে, কাজের চিন্তা করতে করতেই নামাযে দাঁড়িয়ে যাই। তারপর কখন যে নামায শেষ হয়ে গেল, সেটা আর মনে থাকে না। আধা ঘণ্টা পর মনে হয়, যুহরের নামাযটা পরেছিলাম তো?
ধরুন আপনি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলেন যে, তিনি আপনার সাথে দেখা করবেন। ফেইসবুকের মাধ্যমে দেশের প্রতি অসামান্য অবদান রাখার জন্য আপনাকে নিজের হাতে ’বুদ্ধিজীবী’ পদক দিবেন। আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হল প্রেসিডেন্টের দফতরে গিয়ে তাঁর কাছ থেকে পদক নিয়ে আসতে। শুরু হল দিনের পর দিন প্রস্তুতি। আপনি মাস খানেক আগে থেকে চিন্তা করা শুরু করলেন, গিয়ে কি সালাম দিবেন, নাকি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করবেন। চুল পরিপাটি করে আঁচড়িয়ে, আপনার সবচেয়ে দামি কাপড়টা পড়ে তিন ঘণ্টা আগে গিয়ে তাঁর দফতরের সামনে বসে থাকলেন। মনে মনে রিহার্সাল শুরু করে দিলেন কি কথা বলবেন, কিভাবে দাঁড়াবেন, কিভাবে হাসবেন। প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে পারাটা একটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যপার। এরকম সুযোগ মানুষ জীবনে কয় বার পায়? কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, সেই প্রেসিডেন্টের যিনি ঊর্ধ্বতন, যিনি সারা পৃথিবীর সকল প্রেসিডেন্টের উপরে কর্তৃত্ব রাখেন, তিনি আপনাকে সুযোগ দিয়েছেন প্রতিদিন পাঁচ বার তাঁর সাথে দেখা করতে পারার। আর আপনি তাঁর সাথে কিভাবে দেখা করতে যান?
এখন কেন নামায পড়তে গেলে আমাদের মাথায় সারা দুনিয়ার হাজারো চিন্তা চলে আসে? এর একটা মূল কারণ – শয়তান। শয়তান কোনভাবেই চাইবে না যে আপনি নামায পড়েন, কারণ আপনি নামায পড়লেই সে হেরে গেল। এজন্য যখনি আপনি নামায পড়তে দাঁড়াবেন, সে সমস্ত শক্তি নিয়ে আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। একারণেই আমরা নামায শুরু করি শয়তানের কাছ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ্র কাছে আকুল আবেদন করে –
আউ’যু বিল্লাহি মিনাশ শাইতয়ানির রাজিম – আমি আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাই বিতারিত শয়তানের কাছ থেকে।
আউ’যু হচ্ছে অসহায় ভাবে আশ্রয় চাওয়া। ছোট শিশু যেমন ভয় পেলে মায়ের কাছে দৌড়িয়ে যায় আশ্রয় নিতে, তেমনি আমরা অসহায় ভাবে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাই, যেন তিনি আমাদেরকে শয়তানের বাহিনী থেকে রক্ষা করেন। নামাযে এই কথাটি একটু আবেগ নিয়ে বলে দেখুন, একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখুন, দেখবেন কতটা পার্থক্য হয়।
নামাযে মনোযোগ দিতে না পারার আরেকটি বড় কারণ হল, আমরা সারাদিন দৌড়ের উপর থাকি। হাজারো কাজের মাঝখানে একটু সময় নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে ঠাণ্ডা মাথায় নিজেকে চিন্তা করার সুযোগ দেই না। যার কারণে, নামায হয়ে যায় আমাদের একমাত্র মাথা পরিস্কার করার সময়। স্বাভাবিক ভাবেই নামাযে দাঁড়ালে আপনার মাথায় সারাদিনের জমে থাকা চিন্তা গুলো চলে আসবে। সারাদিনের নানা অসহ্য ঘটনা, নানা মানুষের নানান কটু কথা, হাজারো দুশ্চিন্তা আপনার মনের ভিতরে যে চাপ সৃষ্টি করে, সেটাকে বের করার জন্য একমাত্র সুযোগ হচ্ছে মৌন একাকীত্ব। আপনি যদি নামাযের আগে কোনো মৌন সময় পার না করেন, তাহলে নামায হবে আপনার মাথা পরিস্কার করার একমাত্র সময়।
একারণে নামায শুরু করার আগে সময় নিয়ে, ধীরে সুস্থে, ভালোভাবে ওজু করুন, যাতে করে আপনি নিজেকে কিছুটা সময় দিতে পারেন মনের চাপ হালকা করার জন্য। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখুন মাথার মধ্যে হাজারটা চিন্তা জ্যাম হয়ে আছে কি না। যতক্ষণ পর্যন্ত মাথা খালি না হচ্ছে, একাউন্টের হিসাব না মিলছে, কি রান্না করবেন, ড্রাইভারকে কখন তেল আনতে পাঠাবেন ইত্যাদি ঠিক করতে না পারছেন – চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে এক গ্লাস পানি খান। এধরনের কাজ আপনাকে শিথিল হবার সুযোগ দিবে, মনের চাপ হালকা করার সুযোগ দিবে। এছাড়াও নামাযে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলুন আপনি এখন কি করতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবে নিজেকে কিছু কথা বলুন, যাতে অন্যমনস্ক অবস্থায় নামায শুরু করে না দেন। নামাযের গুরুত্ব নিজেকে মনে করিয়ে দিন, কত বড় এক সন্মানিত সত্ত্বার সাথে আপনি কথা বলতে যাচ্ছেন, সেটা নিজেকে আরেকবার মনে করিয়ে দিন। এসব করার পর নামায শুরু করলে আশা করা যায় আপনি নামাযে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন, ইন শাআ আল্লাহ্।
আমরা অনেকে মনে করি আরবিতে নামায পড়লেই হল। নামাযে কি বলছি সেটা না বুঝলেও চলবে, আল্লাহ্ তো বুঝবেই। কি বলছি, সেটার মানে কি, কেন বলতে হবে, বলে কি লাভ – আমাদের এতসব বোঝার দরকার নেই। তাছাড়া আশে পাশের সবাই তো দিব্যি আরবিতে কিছুই না বুঝে নামায পড়ে যাচ্ছে। তারা পারলে আমি কেন পারবো না?
ধরুন কু’রআন যদি আজকে চাইনিজ ভাষায় নাযিল হতো এবং আপনাকে যদি প্রতিদিন নামাযে দাঁড়িয়ে হাত তুলে বলতে হতোঃ
চেন চুন শি চুই ওয়েদা
ব্যপারটা কতখানি অদ্ভুত হতো, ভেবে দেখেছেন কি? কিছুই না বুঝে আরবিতে একই ধরণের কিছু শব্দ উচ্চারণ করাটা কি একই রকম অদ্ভুত ব্যাপার না? ব্যপারটা একটু সময় নিয়ে চিন্তা করলে আপনি বুঝতে পারবেন, কেন আল্লাহ্ এই ভয়াবহ আয়াতগুলো নাযিল করেছেনঃ
আর তোমরা যা বোঝো না, তা অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা – এই সবগুলোর ব্যপারে জবাবদিহি করতে হবে।” [আল-ইসরা ১৭:৩৬]
আল্লাহ তাদেরকে কলুষিত করে দেন যারা তাদের বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করে না। [১০:১০০]
তারা কি কু’রআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, তাদের অন্তর কি তালাবন্ধ? [৪৭:২৪]
আর তারা (জাহান্নামিরা) বলবে, আমরা যদি শুনতাম বা বুদ্ধি খাটাতাম তাহলে আজকে আমরা জাহান্নামিদের মধ্যে থাকতাম না। [৬৭:১০]
এই চারটি আয়াত নিয়ে আমাদের প্রত্যেক মুসলমানের গভীর ভাবে চিন্তা করাটা খুব জরুরি, কারণ আপনি এই চারটি আয়াত নিয়ে চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন যে, কিছুই না বুঝে নামায পড়ে, অথবা কিছুই না বুঝে আরবিতে দোয়া পড়ে আসলে কতখানি লাভ হয়। আপনি নিজেই উপলব্ধি করবেন কেন আমাদের দোয়া গুলো সহজে কবুল হয় না, কেন নামায পড়ে আমাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসে না। সঠিক ভাবে নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কারণ একজন মুসলমান এবং কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায। তাই এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটিতে কোনো ধরণের হেলাফেলা করার মতো বোকামি করাটা উচিত হবে না।
প্রতিটি আয়াত এবং দোয়া পড়ার পর নিজের ভাষায় সেটা একবার চিন্তা করুন – আয়াতটিতে এমন কি রয়েছে যেটা আপনি এর আগে কখনও ভেবে দেখেননি? একই সুরা পাঁচ ওয়াক্তে না পড়ে একেক ওয়াক্তে একেক সুরা পড়ুন। এভাবে চেষ্টা করুন নামাযের মধ্যে যতটুকু সম্ভব বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে। প্রতিদিন প্রত্যেক ওয়াক্ত নামায যদি একইভাবে, একই তালে, একই সুরা এবং দোয়া দিয়ে পড়েন, তাহলে আপনি কখনই নামাযে আগ্রহ এবং মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন না। আপনার মস্তিস্কের ১০% ক্ষমতা নামাযে ব্যয় হবে আর বাকি ৯০% ক্ষমতা ব্যয় হবে মাসের বাজেট, ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার অবস্থা এবং জীবনে কবে কি অর্জন করবেন তার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করতে গিয়ে।
মনে রাখবেন নামায কোনো অনুষ্ঠান না যে আপনি প্রতিদিন কয়েকবার কিছু গদ বাঁধা কথা বলবেন, উঠ-বস করবেন, ডানে-বায়ে তাকাবেন, আর আপনার জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসবে। নামায হচ্ছে আপনার প্রভুর সাথে কথা বলার একটি বিশেষ উপলক্ষ। নামাযের প্রত্যেক সিজদায় এবং শেষ বসায় আল্লাহ্র সাথে নিজের ভাষায় কথা বলুন। আপনার জীবনে যত আনন্দ, যত সুখ, যত কিছু আপনি পেয়েছেন – তার জন্য তাকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিন এবং আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তারপর আপনার যত দুঃখ-কষ্ট, মনের মধ্যে চেপে রাখা যত অভিযোগ, যত ক্ষোভ – সব আল্লাহকে বলে দিন। তিনি অবশ্যই তা শুনবেন এবং তাঁর মতো করে আপনাকে সমাধান দিবেন। মানুষের কাছে ঘ্যান ঘ্যান না করে শুধুই তাঁর কাছে সব সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া শেয়ার করুন। একমাত্র তিনিই পারেন আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে।
নামাযে মনোযোগ না আসার আরেকটি কারণ হল – বিনোদন। আজকালকার জেনারেশন যে পরিমাণের বিনোদনের মধ্যে নিজেদেরকে ডুবিয়ে রাখে, তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রতিদিন তারা পড়াশুনা বা কাজ শেষে ঘরে আসার পড়ে ঘণ্টা খানেক ফেইসবুক, ইউটিউব করে। তারপর ঘণ্টা খানেক গান শুনে। তারপর ঘণ্টা খানেক মোবাইলে গেম খেলে। তারপর ঘণ্টা খানেক ফোনে আড্ডা মারে। তারপর ঘণ্টা খানেক টিভি, না হয় মুভি দেখে। তারপর আবার ঘণ্টা খানেক কম্পিউটারে ফালতু ব্রাউজিং, না হয় গেম খেলা, না হয় বন্ধু বান্ধবের সাথে স্কাইপে চ্যাট। তারপর ঘণ্টা খানেক গল্পের বই। বিনোদনের কোনো শেষ নেই! প্রতিদিন এই বিনোদন গুলো না করলে তাদের কোনো ভাবেই চলে না! আর এই বিনোদনের ফাঁকে যখন একটু সময় পায়, তাড়াতাড়ি উঠে কোনো মতে নামাযে দাঁড়ায়, আর ভাবে, কেন তাদের নামাযে মনোযোগ আসে না!
আজকালকার জেনারেশনের মধ্যে চরম ধরণের ‘বিনোদনাসক্তি’ ঘটেছে। আগে কিশোর, তরুণ সমাজের সমস্যা ছিল মাদকাসক্তি। এখন যোগ হয়েছে বিনোদনাসক্তি। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা নিজেদেরকে বিনোদনে বুঁদ করে রাখতে না পারলে তারা ডিপ্রেশনে চলে যায়। যখন তারা বাথরুমে বসে থাকে, তখন তাদের মাথায় ঘুরতে থাকে কোনো মুভির দৃশ্য, না হয় ব্রিটনি স্পিয়ার্সের লাফালাফি। যখন ঘুমাতে যায়, বিছানায় শুয়ে শুয়ে হিন্দি গান গুণ গুণ করতে থাকে। পড়তে বসে ভাবতে থাকে কিভাবে ’কল অফ ডিউটি’-তে একশো ফুট দূর থেকে স্নাইপার দিয়ে শত্রুর মাথায় গুলি করে তার খুলি ফাঁক করে দেওয়া যায়। এদের মাথা ভর্তি গিজগিজ করে এরকম হাজার রকমের আবর্জনা। এতো আবর্জনা নিয়ে যখন তারা নামায পড়তে দাঁড়ায়, কিভাবে তাদের আল্লাহ্র কথা মনে হবে? মস্তিস্কের কোনো ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকতে হবে তো ভালো কিছু চিন্তা করার জন্য!
আসুন আমরা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি নামাযে আমরা কি বলি। কেন আল্লাহ্ আমাদেরকে দিনে পাঁচবার পড়ালেখা, কাজকর্ম, সংসার সবকিছু ভুলে গিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে আল্লাহকে নিয়ে ভাবতে বলেছেন, তাঁর বানীগুলো নিজেকে বার বার মনে করিয়ে দিতে বলেছেন, তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন – সেটা উপলব্ধি করি। বিশ্ব জগতের সর্বোচ্চ ক্ষমতার সামনে প্রতিদিন পাঁচ বার দাঁড়াবার সন্মান পেয়েছি আমরা। এই বিরাট সন্মানটির যথার্থ মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি এই আয়াতে আল্লাহ্ যাদের কথা বলেছেন, একদিন তাদের মতো হতেঃ
সেই বিশ্বাসীরা কতই না সফল, যারা গভীর মনোযোগের সাথে নামায পড়ে এবং ফালতু কথা থেকে দূরে থাকে। [মু’মিনুন ২৩ঃ১-২]