রাসুল (সা.) সাহরি বা সেহেরি খেতে আদেশ করেছেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।
সাহরিতে বরকত এবং ফজিলত রয়েছে। আর তাই রাসুল (সা.) কখনো সাহরি থেকে বিরত থাকতেন না। সাহাবায়ে কেরামকেও সাহরির ব্যাপারে তাগিদ দিতেন এবং নিজের সঙ্গে শরিক করতেন।
রাসুল (সা.) এর কাছে একজন সাহাবী এলেন যখন তিনি সাহরী খাচ্ছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে দেখে বললেন, এ খাবার বরকতের। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তোমাদের তা দান করেছেন। কাজেই তোমরা সাহরি খাওয়া ছেড়ে দিও না। (নাসাঈ)
তাবারানী শরীফের সূত্রে হযরত আনাস (রা.) এর বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, তিনটি জিনিসে বরকত রয়েছে। জামাআতে, সারিদ এবং সাহরিতে।
মুসলিম শরীফের সূত্রে হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের এ সিয়াম ও আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খৃষ্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া।
সাহরিকে বরকত বলার আরেকটি কারণ হল, সাহরি খাওয়ার ফলে দিনভর ইবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি শরীরে সঞ্চিত থাকবে। সাহরিবিহীন রোজার বিধান দেওয়া হলে তা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে যেত। যেহেতু ইসলাম কোনো ধরনের কষ্টকর বিষয় কারো ওপর চাপিয়ে দিতে ইচ্ছুক নয়, তাই রোজার শুরুতে এ সাহরির বিধান এবং একে বরকতের আহার বলা হয়েছে।
আবার এর আরও একটি ফজিলত হল, সাহরি খাওয়াকে উপলক্ষ করে মুসলমানরা এমন সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন যা অতি মূল্যবান সময় ও মুহূর্ত হিসেবে গণ্য। রাতের এ শেষাংশে আল্লাহ পাক দুনিয়ার আকাশ থেকে ডেকে ডেকে বলেন, কেউ কি আছে আমায় ডাকছে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কেউ কি আছে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে, আমি তাকে মাফ করে দেবো। এভাবে ভোর পর্যন্ত তিনি অবিরত ডেকে যান বান্দাদের। তাই সাহরির এ সময়টুকু অনেক বরকতপূর্ণ। সাহরির আগে পরে সামান্য সময়ের জন্য হলেও বান্দা হাত তুলে আল্লাহকে ডাকবে এবং তিনি এ ডাকে সাড়া দেবেন।
সাহরি খাওয়ার এ বিধান আল্লাহ পাকের তরফ থেকে বান্দার জন্য রহমত ও ভালোবাসার নিদর্শন। আল্লাহ পাক চাইলে সাহরিবিহিন লাগাতার রোযার হুকুম দিতে পারতেন। আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে তিনি আমাদের সুযোগ দিয়েছেন সাহরি খেয়ে বাকি সময়টুকু সংযমে টিকে থাকার জন্য।
সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেসব মুসলমান ভোরের এ সময়ে জেগে আল্লাহ পাকের হুকুম মেনে সাহরি খেতে বসে, আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তাদের জন্য বিশেষ রহমত অবতীর্ণ করেন এবং মহান আল্লাহর ফেরেশতারা সাহরি গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ দোয়া করতে থাকেন। মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় এর বিবরণ রয়েছে।
দেশ ও অঞ্চলভেদে সাহরিতে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবুও রাসুল (সা.) সাহরির সময় খেজুরকে সর্বোত্তম খাদ্যদ্রব্য বলেছেন। আবু দাঊদ শরীফের বর্ণনায় খেজুরকে সর্বোত্তম সাহরি বলেছেন রাসুল (সা.), এজন্য সাহরির সময় দু-একটি খেজুর খেলে এ সুন্নত আদায় হবে। এছাড়া আধুনিককালের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে খেজুরের ভেতর যে শক্তি ও পুষ্টিগুণ রয়েছে তা রোজাদারের জন্য অনেক বেশি শক্তিদায়ক এবং বিশেষ উপকারী।