একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (দ:) এর নিকট এসে কাঁদছেন।
রাসুল (দ:) জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ ? আবু হোরায়রা বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন।
রাসুল (দ:) বললেন, কেন তুমিকি কোন বেয়াদবী করেছ?
আবু হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (দ:) এর দরবার ছাড়বি। আমি বললাম, ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে করে দাও।
তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না।
তখন রাসূল (দ:) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ?
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (দ:) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই।
রাসুল (সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (দ:) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত দান করুন।”
রাসুল (দ:) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন আবু হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখতে চাই আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।
তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি। মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে।হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (দ:) এর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (দ:) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।
“পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট
করে ফেলতে পারো,নতুবা তা রক্ষা করতে পারো।” [সহীহ তিরমিজি ]