নির্বাচিত পোস্টসমূহ
Home » ইসলামী আকিদা » চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (শেষ পর্ব )

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (শেষ পর্ব )

মূল: ড: আবদুল-হাকিম মুরাদ (যুক্তরাজ্য)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে আরেকটি উপমা এখানে দেয়া যায়। আমরা কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহকে তারকা/নক্ষত্রের সাথে তুলনা করতে পারি। খালি চোখে আমরা ওর অনেকগুলোকে দেখতে সক্ষম নই; তাই আমাদের প্রয়োজন দূরবিনের। আমরা যদি বেওকুফ অথবা অহংকারী হই, তবে নিজেরা তা (দূরবিন) বানাতে চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমরা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন এবং বিনয়ী হলে ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বা ইমাম ইবনে হাম্বল (রহ:) প্রমুখ ইমামবৃন্দের দ্বারা আমাদের জন্যে তৈরিকৃত ’দূরবিন’ যন্ত্রই কেবল আমরা ব্যবহার করবো; যে যন্ত্রটি মহা ’জ্যোতির্বিজ্ঞানী’-রূপী পরবর্তী যুগের উলেমাদের প্রজন্মসমূহ দ্বারা সংস্কৃত, পরিমার্জিত ও উন্নত হয়েছে। সার কথা হলো, মযহাব একখানা সূক্ষ্ম যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়, যা দ্বারা আমরা ইসলামকে সম্ভাব্য সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছতাসহ দেখতে সক্ষম হই। আমরা যদি আমাদের নিজেদের তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি, তাহলে আমাদের আনাড়ি চেষ্টাগুলো অনিবার্যভাবে আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে খর্ব করবে।

তৃতীয় নমুনাও এখানে দেয়া যেতে পারে। কোনো জীর্ণ-শীর্ণ উপাসনালয়, যেমন ইস্তাম্বুলের ‘নীল মসজিদ’ (Blue Mosque)-কে সেখানে নামায আদায়কারীদের কারো কারো কাছে হয়তো অসম্পূর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ মনে হতে পারে। উৎসাহী তরুণরা যাদের অন্তরে এই ইমারতকে আরও সুন্দর ও সুনির্মাণ (এবং নিঃসন্দেহে নিজেদের সময়বদ্ধ পছন্দের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ) করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তারা হয়তো ইমারতের নিচে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ কক্ষে (crypts and basement) প্রবেশ করে স্থাপত্যকৌশলের নিজস্ব ধারণা অনুযায়ী ওপরের ইমারত যে ভিত্তিপ্রস্তর ও স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তাকে পুনর্বিন্যাস করলো। তারা কিন্তু পেশাদার স্থপতিদের পরামর্শ নিলো না, শুধু একজন বা দুইজন ছাড়া – যাদের কথাবার্তা তাদের মনে ধরেছিল (ইবনে তাইমিয়া/ইবনে আবদিল ওয়াহহাব); শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যাঁরা এই ইমারতকে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন, তাঁদের বইপত্র ও স্মৃতিকথার ধার তরুণেরা ধারলো না। তাদের উদ্দীপনা ও অহংকারের কাছে ওই সময় কোথায়? ভূগর্ভস্থ কক্ষের আঁধারে হাতিয়ে হাতিয়ে তারা নিজেদের সাথে আনা শাবল ও ড্রিল মেশিন দ্বারা স্বভাবজাত উৎসাহ নিয়ে কাজে নেমে পড়লো।

সুন্নী মতাদর্শভিত্তিক ইসলামের প্রতি অনুরূপ এক আচরণের বিপদ এখন দেখা দিয়েছে। এই ইমারত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর শত্রুদের তীব্র আঘাত সহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু অন্তর্ঘাত দ্বারাই একে দুর্বল করা সম্ভব। ইসলামের অনেক বুদ্ধিমান শত্রু আছে এবং তারা এই বিষয়টি ভালভাবে জানে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের উত্তম পরহেযগারী সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যকার বিভক্তি এবং চার মযহাবের মহান ইমামবৃন্দের দ্বারা শরীয়তের চূড়ান্ত সংকলনের পরে সুন্নী মতাদর্শের সুষম ও অবিভক্ত রূপ নিশ্চয় বৈরী মস্তিষ্কগুলোতে চক্রান্তের বীজ বপণ করেছিল। এই বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে, মহান মযহাবগুলোকে যারা আক্রমণ করে তারা ইসলামের শত্রুদের সচেতন ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এতে এইটুকু ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যে কেন তারা এতো ভাল প্রচার-প্রপাগান্ডা ও মোটা তহবিল পেয়ে চলেছে, অপর পক্ষে সুন্নাহভিত্তিক মৌলিক আদর্শটি তা থেকে অভুক্ত রয়েছে। প্রত্যেক মুসলমান অহংকারী ‘মুজতাহিদ’-এ পরিণত হওয়ায় এবং ‘তাকলিদ’-কে বিনম্র ও প্রয়োজনীয় গুণের পরিবর্তে পাপ হিসেবে বর্জন করায় আমাদের প্রাথমিক যুগের হৃদয়বিদারক ভিন্ন মতগুলো আবারো নিশ্চয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। মিলে-মিশে অবস্থানকারী চার মযহাবের পরিবর্তে তিক্ত ও হামসাঁচ্চাই-জনিত বিভেদের কোটি খানেক মযহাবের আবির্ভাব ঘটবে। ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের জন্যে এর চেয়ে অতিশয় চতুর ষড়যন্ত্র আর কখনোই পরিকল্পনা করা হয় নি।

[এই প্রভাষণটি আগস্ট ১৯৯৫ সালে এইলসবারী মসজিদে প্রদান করা হয়। এটি Islamica ম্যাগাজিনে ১৯৯৫ সালে পুনঃমুদ্রিত হয়।]

 

লেখাগুলো পর্ব আকারে দেওয়া হয়েছে। নিচে থেকে সবগুলো পর্ব পড়ুন।

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ১)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ২)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৩)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৪)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৫)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৬)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৭)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৮)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (পর্ব- ৯)

চার মাজহাবের মূল্যায়ন: লা-মাজহাবী ফিতনা (শেষ পর্ব )

Did you like this? Share it:

About কিতাবুল ইলম

রাসুল সাঃ বলছেন, "প্রচার কর, যদিও তা একটি মাত্র আয়াত হয়" সেই প্রচারের লক্ষে আমরা। 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক' প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

Leave a Reply